⚡ ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সঠিক নিয়ম (A-Z গাইড)

ভূমিকা: আপনার ইন্টারনেট কি সত্যিই স্লো?

“আমার ইন্টারনেটের স্পিড এত কম কেন?” — এই প্রশ্নটি প্রায় সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর। হাই-স্পিড প্যাকেজের জন্য টাকা পরিশোধ করার পরেও যদি বাফারিং বা স্লো ডাউনলোডের শিকার হতে হয়, তাহলে হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এর পেছনের মূল কারণ হতে পারে দুটি— হয় আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) আপনাকে প্রতিশ্রুত স্পিড দিচ্ছে না, অথবা আপনি স্পিড সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারছেন না। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সম্পূর্ণ গাইড দেব। Mbps ও MB/s-এর পার্থক্য থেকে শুরু করে, সঠিক টুল ব্যবহার এবং ফলাফল বোঝার কৌশল— সবকিছু জানতে পারবেন এই লেখাটি পড়লে।

🔍 ইন্টারনেট স্পিড মাপার আগে মূল বিষয়গুলো জানুন

ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে কথা বলার সময় দুটি শব্দ প্রায়ই আমাদের দ্বিধায় ফেলে দেয়: Mbps এবং MB/s। এই দুটির পার্থক্য না বুঝলে আপনি কখনোই আপনার আসল স্পিড হিসাব করতে পারবেন না।

🔸 Mbps বনাম MB/s: পার্থক্য কী?

• Mbps (Megabits per second): এটি হলো মেগাবিটস পার সেকেন্ড। আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার যে স্পিডের প্যাকেজ বিক্রি করে, তা সাধারণত Mbps-এ উল্লেখ করা থাকে। যেমন: 20 Mbps, 50 Mbps ইত্যাদি।
• MB/s (Megabytes per second): এটি হলো মেগাবাইটস পার সেকেন্ড। আপনি যখন কোনো ফাইল ডাউনলোড করেন, তখন ব্রাউজার বা ডাউনলোড ম্যানেজারে যে স্পিড দেখতে পান, সেটিই হলো MB/s।

🧠 মূল সূত্রটি মনে রাখুন: 1 Byte = 8 bits। এর মানে হলো, আপনার প্যাকেজের স্পিডকে (Mbps) ৮ দিয়ে ভাগ করলেই আপনি আপনার সর্বোচ্চ ডাউনলোড স্পিড (MB/s) পেয়ে যাবেন।

উদাহরণ: আপনার ইন্টারনেট প্যাকেজ যদি 100 Mbps হয়, তাহলে আপনার ডাউনলোড স্পিড হবে: (100 ÷ 8) = 12.5 MB/s।

💻 কিভাবে ইন্টারনেট স্পিড চেক করবেন? (সেরা ৩টি টুল)

বাজারে অনেক স্পিড টেস্ট টুল থাকলেও, নির্ভুল ফলাফলের জন্য নিচের তিনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য।

✅ ১. Speedtest by Ookla

এটি ইন্টারনেট স্পিড টেস্টের জন্য বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত টুল। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী সার্ভার (যেমন: Local, BDIX, International) বেছে নিয়ে টেস্ট করতে পারবেন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বড় “GO” বাটনে ক্লিক করলেই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।

✅ ২. Fast.com

Netflix পরিচালিত এই টুলটি ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে সহজ। কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই এক ক্লিকে স্পিড জানা যায়। ব্রাউজারে এই ঠিকানাটি টাইপ করার সাথে সাথেই অটোমেটিক স্পিড টেস্ট শুরু হয়ে যায়।

✅ ৩. Google Speed Test

Google-এ গিয়ে “Internet speed test” লিখে সার্চ করুন। সার্চ রেজাল্টের প্রথমেই একটি বক্স আসবে, সেখানে “RUN SPEED TEST” বাটনে ক্লিক করে সহজেই স্পিড পরীক্ষা করতে পারবেন।

🧪 স্পিড টেস্ট করার সঠিক পদ্ধতি (নির্ভুল ফলাফলের জন্য)

শুধুমাত্র স্পিড টেস্ট ওয়েবসাইটে গেলেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। নির্ভুলভাবে স্পিড মাপার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

• Wi-Fi নয়, LAN Cable ব্যবহার করুন: Wi-Fi সিগন্যাল রাউটারের দূরত্ব, দেয়াল এবং অন্যান্য ডিভাইসের কারণে দুর্বল হতে পারে। তাই সবচেয়ে সঠিক স্পিড মাপার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সরাসরি LAN বা Ethernet Cable লাগিয়ে টেস্ট করুন।
• ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও ডাউনলোড বন্ধ রাখুন: স্পিড টেস্ট করার সময় আপনার ডিভাইসে অন্য কোনো ফাইল ডাউনলোড, ভিডিও স্ট্রিমিং বা সফটওয়্যার আপডেট চললে তা বন্ধ করুন। নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্য ডিভাইসগুলোও সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় রাখুন।
• একাধিকবার পরীক্ষা করুন: দিনের বিভিন্ন সময়ে (যেমন: সকাল, দুপুর ও রাত) স্পিড টেস্ট করুন। কারণ, পিক আওয়ারে (সাধারণত সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা) ব্যবহারকারী বেশি থাকায় স্পিড কিছুটা কম থাকতে পারে।
• বিভিন্ন সার্ভার দিয়ে টেস্ট করুন: Speedtest.net ব্যবহার করে আপনার ISP-এর লোকাল সার্ভার, BDIX সার্ভার এবং কোনো আন্তর্জাতিক সার্ভার (যেমন: সিঙ্গাপুর) পরীক্ষা করুন। এতে আপনি সার্বিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

📊 কিভাবে বুঝবেন আপনি ঠকছেন কি না?

এখন মূল প্রশ্নে আসা যাক। কিভাবে বুঝবেন আপনার ISP আপনাকে সঠিক স্পিড দিচ্ছে? ধরুন, আপনার প্যাকেজ 50 Mbps। তাহলে আপনার প্রত্যাশিত ডাউনলোড স্পিড হবে: (50 ÷ 8) = 6.25 MB/s।

এবার Fast.com বা Speedtest.net-এ পরীক্ষা করার পর ফলাফল দেখুন:

• যদি স্পিড 45–50 Mbps এর মধ্যে আসে: অভিনন্দন! আপনি সঠিক স্পিড পাচ্ছেন। স্পিডে ৫-১০% তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক।
• যদি স্পিড 25–35 Mbps আসে: আপনি প্যাকেজের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম স্পিড পাচ্ছেন। আপনার অভিযোগ জানানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
• যদি স্পিড 10–20 Mbps আসে: আপনাকে बुरीভাবে ঠকানো হচ্ছে। দ্রুত আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করুন।

🧾 এক নজরে স্পিড কনভার্সন চার্ট

🛠️ স্পিড কম পেলে করণীয় কী?

বারবার পরীক্ষা করার পরও যদি দেখেন স্পিড ধারাবাহিকভাবে কম আসছে, তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো নিন:

• রাউটার রিস্টার্ট করুন: অনেক সময় সাধারণ নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে স্পিড কম হতে পারে। আপনার রাউটারটি বন্ধ করে ৩০ সেকেন্ড পর আবার চালু করুন।
• সঠিক তথ্যসহ অভিযোগ করুন: আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডারের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিন। আপনার প্যাকেজের নাম এবং বিভিন্ন সময়ে করা স্পিড টেস্টের ফলাফল (স্ক্রিনশটসহ) জানান।
• ধৈর্য ধরে ফলো-আপ করুন: একবার অভিযোগ করেই থেমে যাবেন না। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ করে ফলো-আপ করতে থাকুন।

শেষ কথা

আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ার পর ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে আপনার সকল ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। এখন থেকে আপনি নিজেই নিজের ইন্টারনেটের আসল স্পিড পরিমাপ করতে পারবেন এবং আপনার প্রোভাইডার আপনাকে সঠিক সেবা দিচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে পারবেন। সঠিক জ্ঞানই আপনাকে ঠকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।

অন্যান্য আর্টিকেল পড়ুন: 🎓 HSC 2027 ব্যাচ: স্বপ্নজয়ের সেরা প্রস্তুতি শুরু হোক আজই!