PSC question leak

পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোটাবিরোধী আন্দোলন

সম্প্রতি চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল ইমরান কতৃক বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ন্যায্যতা সম্পর্কে গভীর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ৩৩তম বিসিএস থেকে সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএস পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার সাথে পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী সহ মোট ১৭ জনের নাম সামনে এসেছে। এদের মধ্যে পিএসসির পরিচালক এবং উপ-পরিচালকও আছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিএইডি। 

সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির মালিক। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি সহ বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সামনে আসলে ছাত্রলীগ তাকে অব্যাহতি দেয়। এছাড়া তিনি  মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। সেখান থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। 

পিএসসি সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অথচ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন “প্রশ্ন ফাঁস করে যা কামিয়েছি তার সবই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি। 

এদিকে জানা গেছে আবেদ আলী বাংলাদেশ পাব‌লিক সা‌র্ভিস ক‌মিশন (বিপিএসসি) এর ৮ম চেয়ারম্যান ও ১ম নারী চেয়ারম্যান ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম এর ড্রাইভার ছিলেন। তি‌নি সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী তাহসানের মা।

বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা, যেখানে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন, সেখানে শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তাদের স্বপ্নকে ভেঙে দেয় এবং শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বিশ্বাসহীনতার সৃষ্টি করে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ এসেছে। এ পরীক্ষাটিও পিএসসি কতৃক পরিচালিত হয়েছিল।

পিএসসি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। 

 একই সময়ে, সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে। কিছুদিন আগে হাইকোর্টের আদেশে কোটা পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা ন্যায্যতার দাবিতে “বাংলা ব্লকেড” করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পক্ষে এই আন্দোলনকে অন্যায্য বলা হলেও, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

সর্বশেষ এ ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সম্পর্কে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এতে না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।​